নিঃশব্দ সন্ধ্যার গ্রাম
বিকেলবেলা, পশ্চিমবঙ্গের এক ছোট্ট গ্রামের দৃশ্য। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, খোলা মাঠে ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা করছে। নদীর তীরে একদল ছেলে মেয়েরা পানিতে দাপাচ্ছে। আকাশে লাল সূর্য ডুবছে, তার রশ্মি গ্রামের মাটিকে সোনালি আভা দিচ্ছে।
এই গ্রামে বাস করে একদল সরল ও কর্মঠ মানুষ। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম। গ্রামের মাঝখানে বড় বটগাছটির নিচে বসে আছেন গ্রামের বয়স্ক মানুষজন। তারা আজকের দিনের নানা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
কৃষক মোহন কাকা তার খেত থেকে ফিরে আসছেন। তার হাতে একটি খুন্তি, মুখে সন্তুষ্টির হাসি। আজকের ফসল ভালো হয়েছে। তার স্ত্রী সরলা কাকিমা উঠোনে বসে চুলায় রান্না করছেন। ছোট্ট মেয়ে মীনা তার মা'কে সাহায্য করছে, মাঝে মাঝে খেলার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
গৃহবধূরা সবাই মিলে গঙ্গার তীরে কাপড় কাচতে গেছে। তাদের হাসির শব্দ আর কলকল নদীর ধারা এক হয়ে মিশে গেছে। গ্রামের প্রতিটি ঘরেই যেন সুখের বাতাস বইছে।
গ্রামের মন্দিরে সন্ধ্যার আরতি চলছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি আর শঙ্খধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত। প্রত্যেকেই মন প্রান ঢেলে প্রার্থনা করছে। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করে, এই প্রার্থনার ফলেই তাদের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে।
ছোট্ট ছেলেটি কুট্টু, বটগাছের নিচে বসে তার দাদুর কাছে গল্প শুনছে। দাদু বলছেন, "আমাদের গ্রাম একদিন অনেক বড় হবে, এখানকার মানুষরা নিজেদের পরিশ্রম আর সততায় এগিয়ে যাবে।" কুট্টুর চোখে স্বপ্নের আলো ঝিলিক দিচ্ছে।
রাতের আঁধার নামছে। এক এক করে প্রতিটি বাড়ির প্রদীপ জ্বলে উঠছে। গ্রামের মানুষরা সারাদিনের পরিশ্রম শেষে শান্তিতে বিশ্রাম নিচ্ছে। তাদের জীবনে এই ছোট ছোট সুখের মুহূর্তই যেন সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
এমনই এক নিঃশব্দ সন্ধ্যা, যখন গ্রামের প্রতিটি কোণায় কোণায় শান্তি ও সুখের বাতাস বইছে। এই গ্রামই যেন প্রকৃতির এক টুকরো স্বর্গ।