হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য (The Lost Beauty)
একটি ছোট্ট গ্রামে ছিল ছোট্ট ছেলে, নাম তার রাজু। রাজু ছিল খুব চঞ্চল এবং কৌতূহলী। তার গ্রামের পাশেই ছিল একটি পুরোনো বাগান, যা ছিল অনেক বছর ধরে অব্যবহৃত এবং ভগ্নপ্রায়। কিন্তু রাজুর কাছে সেই বাগান ছিল এক রহস্যের আধার। প্রতিদিন বিকেলে রাজু বাগানে গিয়ে বিভিন্ন রকমের ফুল ও পাখিদের দেখে আনন্দ পেত।
একদিন বিকেলে রাজু বাগানে একটি অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল। সে অনুসরণ করে দেখতে পেল, এক বৃদ্ধা মহিলা বাগানে কাজ করছেন। বৃদ্ধার নাম ছিল শ্যামা। শ্যামা গ্রামে একসময় অনেক পরিচিত ছিলেন, কিন্তু কিছুদিন আগে তিনি শহর থেকে ফিরে এসেছিলেন এবং গ্রামে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন।
শ্যামা বাগানে রাজুকে দেখে বললেন, "এই বাগান অনেকদিন ধরে অব্যবহৃত ছিল। আমি এটি নতুন করে সাজিয়ে তুলছি। তুই কি আমার সাথে কাজ করতে চাস?"
রাজু আনন্দিত হয়ে বলল, "অবশ্যই! আমি খুব ভালোবাসি বাগানে কাজ করতে।"
এইভাবে রাজু ও শ্যামা প্রতিদিন বিকেলে বাগানে কাজ করতে শুরু করলো। রাজু শিখতে লাগলো বিভিন্ন ফুল ও গাছের যত্ন নেওয়া। শ্যামা তাকে অনেক কিছু শেখালেন, যেমন মাটি কিভাবে তৈরি করতে হয়, গাছের রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করতে হয়।
দিন যেতে লাগলো এবং বাগান ধীরে ধীরে তার পুরোনো সৌন্দর্য ফিরে পেল। বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটলো, পাখিরা গান গাইতে শুরু করলো, এবং গ্রামে সবাই এই পরিবর্তন দেখে আনন্দিত হলো। রাজুর প্রচেষ্টা ও শ্যামার অভিজ্ঞতা মিলে বাগানটি হয়ে উঠলো এক সুন্দর জায়গা, যেখানে গ্রামের সবাই এসে সময় কাটাতে লাগলো।
একদিন, গ্রামে একটি বড় উৎসবের আয়োজন করা হলো। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো, এই বছর উৎসবটি হবে নতুন করে সাজানো বাগানে। রাজু ও শ্যামা অনেক খুশি হলেন। রাজু মনে মনে ভাবলো, "এই বাগান আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে। আমি এখানে অনেক কিছু শিখেছি এবং এটা আমার গর্ব।"
উৎসবের দিন বাগানটি আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো। বিভিন্ন রকমের মেলা, গান, নাচ, আর খাবারের আয়োজন করা হলো। গ্রামের সবাই খুব আনন্দ করলো এবং বাগানের নতুন সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলো।
রাজু ও শ্যামা বাগানের এক কোণে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে মনের আনন্দে হাসলেন। শ্যামা রাজুকে বললেন, "তুই অনেক ভালো কাজ করেছিস, রাজু। এই বাগানটি তোর মতোই সুন্দর হয়ে উঠেছে।"
রাজু বিনয়ীভাবে উত্তর দিল, "আপনার কাছ থেকে শিখেছি, তাই পেরেছি। এই বাগান আমাদের সকলের আনন্দের স্থান হয়ে উঠেছে।"
এইভাবে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরে এলো, রাজু ও শ্যামার পরিশ্রম ও ভালোবাসার জন্য। গ্রামে সবাই এই বাগানের গল্প বলতো এবং রাজু ও শ্যামা হয়ে উঠলো গ্রামের গর্ব।